বেকারি পণ্যের নামে আসলে আমরা কি খাচ্ছি

- Update Time : ১০:২৬:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / ৩৬ Time View

বেকারি পণ্যের নামে আসলে আমরা কি খাচ্ছি ?
মো: ফারুক হোসেন,ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:-নেত্রকোনা সদর উপজেলার বেশিরভাগ বেকারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে বলে দেখা যায়।খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণেও রয়েছে চরম অব্যস্থাপনা।এছাড়াও পণ্য রাখার ঘর ও অপরিষ্কার,পোকামাকড়েও ভরপুর। সর্বোপরি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স।আর থাকলেও মান বজায় রেখে উৎপাদন করা হচ্ছে না বলে দেখা যায়। অনুমোদন ছাড়াই বেকারি পণ্যের উৎপাদন এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে মানব স্বাস্থ্যের বিষয়টি এখন হুমকির মুখে পড়ছে। সম্প্রতি কিছু অনুসন্ধানে বেকারি পণ্যের উৎপাদনের এই বেহাল চিত্র উঠে আসে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষ নিয়মিত ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকেন বেকারির পণ্যের কারখানায়, হোটেল রেস্টুরেন্ট ও পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে। অভিযানে দেখা যাচ্ছে,এসব অভিযোগ ছাড়াও বেকারি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছে না।এমন অভিযোগ নেত্রকোনা সদর উপজেলার বেশিরভাগ বেকারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে।
১৫ ই জুলাই ২০২৫ ইং রোজ মঙ্গলবার নেত্রকোনা সদর উপজেলার ১ নং মৌগাতী ইউনিয়নের হাটখলা বাজারে অবস্থিত ‘নিউ একতা বেকারির’ কারখানায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে চরম অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা যায়। একইসঙ্গে খাদ্য সংরক্ষণের কক্ষ অপরিষ্কার পাওয়া যায়।উক্ত বেকারির মালিক আরশাদ মিয়ার সঙ্গে কারখানা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং খাদ্যের মান ভালো রাখতে এবং সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কারখানা পরিচালনার কথা বললে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেন।
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী বেকারি কর্তৃপক্ষ পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় লাইসেন্স,যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদ,পণ্য ক্রয় চালানের কপি,পেস্ট কন্ট্রোল প্রমাণকসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্রও নেই প্রতিষ্টানটির বলে জানান এলাকাবাসী। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন কিন্তু নিউ একতা বেকারির কারখানায় কারোও কেনো নজরে আসে না এই বলে এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ভুক্তারা জানায়,বেকারি পণ্য থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এমনকি বিশুদ্ধ খাবার পানিও সম্পূর্ণ ভেজাল মুক্ত নয়। এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার উৎপাদনে কোন নিয়মনীতির বালাই নেই। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে প্রস্তুতকৃত খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রসেস করা খাবারে কোন লেবেলিং পাওয়া যাচ্ছে না। পচা ও বাসি খাবার মিলছে উক্ত বেকারি গুলিতে। বিশেষ করে নেএকোনা সদর উপজেলার হাটখোলা বাজারের নিউ একতা বেকারি পণ্য চরম নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বলে দেখা যায়। উক্ত বেকারির খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতসহ কর্মচারীদের কোন স্বাস্থ্য সনদ নেই বলে জানান ভুক্তারা।
উক্ত বেকারির খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান,এই ধরনের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বেকারীগুলোতে চরমভাবে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয় বলে জানান তারা। এসব প্রতিষ্ঠানকে বারবার নিয়ম মেনে খাদ্য প্রস্তুত, বিতরণ এবং সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা মানছে না। এমনকি ফ্রিজের খাদ্য সংরক্ষণ করে পন্য তৈরি করার ও অভিযোগ রয়েছে ।আবার খাদ্যের কোন লেবেলিং নেই। বিশেষ করে খাদ্যের উৎপাদন এবং মেয়াদসহ পণ্যের গায়ে লেবেল সেঁটে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া বেকারি পণ্য উৎপাদনে যে রং ব্যবহার করা হচ্ছে তাও ফুড গ্রেড নয়।ভেজাল পণ্য দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বেকারি গুলোতে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, পিওর ফুড উৎপাদনে যে মান বজায় রেখে বেকারির পণ্য তৈরির বিধান রয়েছে,তার ধারের কাছেও নেই কারখানার মালিকরা। পণ্যের মান সংরক্ষণে নেই কোন ব্যবস্থা। উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলেও মেয়াদ নেই অনেক বেকারি পণ্যের গায়ে। বারবার এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাদ্য তৈরির কোন উন্নতি হচ্ছে না।অভিযান পরিচালনার কারণে বেকারি পণ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নিলেও তারা উৎপাদনের শর্ত মানছে না। অভিযান চলছে,জরিমানা মামলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কী?গত এক বছরে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বহুবার অভিযান পরিচালনা করেছেন ভোক্তা অধিকার। এতো অভিযান সচেতনতার পড়েও কোন কোন প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স থাকলেও উৎপাদনকারীরা বিএসটিআইয়ের কোন শর্ত মানছে না। মান বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন করছে না। অভিযানে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানে দেখা গেছে, কালিঝুলি মাখা প্রতিটি কারখানার ভেতরে-বাইরে নোংরা কাদা,তরল ময়লা-আবর্জনা পরিবেশ। দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। আশপাশেই নর্দমা ময়লার তোফ, মশা-মাছির ভন ভন।
এমন এক অস্বাস্থ্যকর বেকারির সন্ধান মিলে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ১ নং মৌগাতী ইউনিয়নের হাটখোলা বাজারে নিউ একতা বেকারির চিত্র। উক্ত কারখানাটি স্থাপিত হয়েছে টিনশেড বিল্ডিংয়ে। বহু পুরনো চালার টিনগুলো স্থানে স্থানে ছিদ্র থাকায় বৃষ্টির পানি ও কাদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খাবারের কারখানায়।এছাড়াও রাত-দিন গরমের ঘামে চুপসানো অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা-দলিত মথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্য।এমনি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে নিউ একতা বেকারি পণ্য। যা এলাকার চায়ের দোকানীদের সকালে নাস্তার জন্য তৈরি করা হয়। উৎপাদন ব্যয় কমাতে এসব বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে এই সব খাদ্য। কেক ও ব্রেড তৈরির জন্য পেপারমেন্ট, সোডা ও ব্রেকিং পাউডার ব্যবহার করা হচ্ছে। বেকারি কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে টেক্সটাইলের রং সহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার করতে দেখা যায়। কারখানা গুলোয় দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল ও পচা ডিম। বেকারিতে পচা ডিম ব্যবহার যেনো সাধারণ বিষয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এই ধরনের পরিবেশে ও যেসব দ্রব্য দিয়ে বেকারি পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই এলাকাবাসীর দাবি এই সব খাদ্যদ্রব্যে তৈরির কারখানার উপর নজর রাখা এবং এই সমস্ত অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।