১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজারে পেঁয়াজের কড়া ঝাঁঝ বিটিটিসির বিশ্লেষণে দাম বৃদ্ধির চার কারণ

Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৭২ Time View

বাজারে পেঁয়াজের কড়া ঝাঁঝ বিটিটিসির বিশ্লেষণে দাম বৃদ্ধির চার কারণ

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ=দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা এ নিত্যপণ্যটির কেজিপ্রতি দাম দেড়শ টাকা অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহেই বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিবছরের মতো এবারও নভেম্বর–ডিসেম্বর মাসের শুরুতে একই প্রবণতা দেখা দেওয়ায় ভোক্তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চলমান মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে জানিয়েছে—উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরবরাহ চেইনের প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, সংরক্ষণ সুবিধার অভাব, মৌসুমের শেষভাগে উৎপাদন সংকোচন এবং অতিবৃষ্টিতে আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হওয়াই এ সময় মূল্যবৃদ্ধির মূল চার কারণ।

সরবরাহ কম, বাজারে আগাম পেঁয়াজের প্রভাব এখনো সীমিতঃপাইকাররা জানিয়েছেন, নতুন মৌসুমের আগাম জাতের পেঁয়াজ এখনও পূর্ণমাত্রায় বাজারে ঢোকেনি। উৎপাদনকারী অঞ্চল থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সীমিত পরিসরে ‘মুড়িকাটা’ আগাম জাতের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে।
গতকাল শনিবার পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কমে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১০৫ টাকা, অন্যান্য দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০–১২০ টাকায়।মেসার্স কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন,“সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এ সপ্তাহে আগাম পেঁয়াজ আসায় কিছুটা স্থিতি ফিরে এসেছে। সরকার সীমিত আকারে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

খুচরা বাজারে এখনো উচ্চদাম—লাভ সীমিত বলছেন বিক্রেতারাঃচট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট,চকবাজার ও দুই নম্বর গেট এলাকায় গতকাল ঘুরে দেখা গেছে—খুচরা পর্যায়ে মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।বহদ্দারহাটে ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন আবু তাহের। তিনি বলেন,“আড়ত থেকে আনতে ১৩৫–১৪০ টাকা খরচ পড়ে যায়। আমরা ৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। দাম বাড়ার জন্য আমরা দায়ী নই।বিটিটিসির অনুসন্ধানে চার কারণেই দাম বাড়ছে১. সংরক্ষণাগারের অভাবঃ পেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম জানুয়ারি–এপ্রিল। কৃষকরাই নিজেদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেন। সরকারি বা আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় বছর শেষে বাজারে সংকট তৈরি হয়। এতে পাইকারি এবং খুচরা—উভয় পর্যায়ে দাম বাড়ে।২. মৌসুমের শেষ পর্যায়ঃ নভেম্বর–ডিসেম্বর মূলত পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ সময়। এ সময়ে কৃষকের মজুত কমতে থাকে।সরবরাহ সংকুচিত হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে উত্তাপ তৈরি হয়।৩. মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যঃ উৎপাদনকারী কৃষকের হাত থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পেঁয়াজ একাধিক পর্যায়ে হাতবদল হয়। প্রতিটি ধাপেই অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বিটিটিসি বলছে—এই অতি মুনাফাই দাম বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ।৪. বৃষ্টিতে আগাম পেঁয়াজ নষ্টঃ গত আগস্টে পাবনা, ফরিদপুর, মেহেরপুর, রাজবাড়ীসহ পেঁয়াজ উৎপাদনসমৃদ্ধ জেলাগুলিতে অতিবৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক পরিমাণ আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরেই যে পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা ছিল, তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ক্যাবের অভিযোগ: কৃত্রিম সংকটই মূল দায়ী কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন,“ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম ৩–৪ টাকা। দেশটি রপ্তানি শুল্কও কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি অংশ এ সুযোগকে অজুহাত বানিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ভারত থেকে আমদানির সুযোগ পেলে কয়েক গুণ লাভ হবে—এ কারণেই ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে চাপ বাড়ানো হয়েছে।

সরকারের উদ্যোগ: সীমিত আকারে আমদানি শুরুঃ সরকার রবিবার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি বাজারে চাপ কমাবে এবং মূল্য স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।পেঁয়াজের বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।তবে আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ ও আমদানি শুরু হওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে ইতিবাচক সংকেত দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর সুফল পৌঁছাবে—এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বাজারে পেঁয়াজের কড়া ঝাঁঝ বিটিটিসির বিশ্লেষণে দাম বৃদ্ধির চার কারণ

Update Time : ০৮:৪৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

বাজারে পেঁয়াজের কড়া ঝাঁঝ বিটিটিসির বিশ্লেষণে দাম বৃদ্ধির চার কারণ

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ=দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা এ নিত্যপণ্যটির কেজিপ্রতি দাম দেড়শ টাকা অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহেই বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিবছরের মতো এবারও নভেম্বর–ডিসেম্বর মাসের শুরুতে একই প্রবণতা দেখা দেওয়ায় ভোক্তাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চলমান মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে জানিয়েছে—উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরবরাহ চেইনের প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, সংরক্ষণ সুবিধার অভাব, মৌসুমের শেষভাগে উৎপাদন সংকোচন এবং অতিবৃষ্টিতে আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হওয়াই এ সময় মূল্যবৃদ্ধির মূল চার কারণ।

সরবরাহ কম, বাজারে আগাম পেঁয়াজের প্রভাব এখনো সীমিতঃপাইকাররা জানিয়েছেন, নতুন মৌসুমের আগাম জাতের পেঁয়াজ এখনও পূর্ণমাত্রায় বাজারে ঢোকেনি। উৎপাদনকারী অঞ্চল থেকে সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সীমিত পরিসরে ‘মুড়িকাটা’ আগাম জাতের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে।
গতকাল শনিবার পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কমে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ১০৫ টাকা, অন্যান্য দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০–১২০ টাকায়।মেসার্স কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন,“সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এ সপ্তাহে আগাম পেঁয়াজ আসায় কিছুটা স্থিতি ফিরে এসেছে। সরকার সীমিত আকারে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

খুচরা বাজারে এখনো উচ্চদাম—লাভ সীমিত বলছেন বিক্রেতারাঃচট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট,চকবাজার ও দুই নম্বর গেট এলাকায় গতকাল ঘুরে দেখা গেছে—খুচরা পর্যায়ে মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।বহদ্দারহাটে ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন আবু তাহের। তিনি বলেন,“আড়ত থেকে আনতে ১৩৫–১৪০ টাকা খরচ পড়ে যায়। আমরা ৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। দাম বাড়ার জন্য আমরা দায়ী নই।বিটিটিসির অনুসন্ধানে চার কারণেই দাম বাড়ছে১. সংরক্ষণাগারের অভাবঃ পেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম জানুয়ারি–এপ্রিল। কৃষকরাই নিজেদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেন। সরকারি বা আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় বছর শেষে বাজারে সংকট তৈরি হয়। এতে পাইকারি এবং খুচরা—উভয় পর্যায়ে দাম বাড়ে।২. মৌসুমের শেষ পর্যায়ঃ নভেম্বর–ডিসেম্বর মূলত পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ সময়। এ সময়ে কৃষকের মজুত কমতে থাকে।সরবরাহ সংকুচিত হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে উত্তাপ তৈরি হয়।৩. মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যঃ উৎপাদনকারী কৃষকের হাত থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে পেঁয়াজ একাধিক পর্যায়ে হাতবদল হয়। প্রতিটি ধাপেই অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বিটিটিসি বলছে—এই অতি মুনাফাই দাম বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ।৪. বৃষ্টিতে আগাম পেঁয়াজ নষ্টঃ গত আগস্টে পাবনা, ফরিদপুর, মেহেরপুর, রাজবাড়ীসহ পেঁয়াজ উৎপাদনসমৃদ্ধ জেলাগুলিতে অতিবৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক পরিমাণ আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরেই যে পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা ছিল, তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ক্যাবের অভিযোগ: কৃত্রিম সংকটই মূল দায়ী কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন,“ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম ৩–৪ টাকা। দেশটি রপ্তানি শুল্কও কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি অংশ এ সুযোগকে অজুহাত বানিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ভারত থেকে আমদানির সুযোগ পেলে কয়েক গুণ লাভ হবে—এ কারণেই ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে চাপ বাড়ানো হয়েছে।

সরকারের উদ্যোগ: সীমিত আকারে আমদানি শুরুঃ সরকার রবিবার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি বাজারে চাপ কমাবে এবং মূল্য স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।পেঁয়াজের বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।তবে আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ ও আমদানি শুরু হওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে ইতিবাচক সংকেত দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও এর সুফল পৌঁছাবে—এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের