১১:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নার্স দিয়ে ডেলিভারীতে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৮ Time View

নার্স দিয়ে ডেলিভারীতে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

মোঃসুলতান মাহমুদ,শ্রীপুর:=গাজীপুরের শ্রীপুরে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে নার্স দিয়ে প্রসূতির ডেলিভারী করার সময় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে আল রাজি নামক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর মৃত নবজাতককে নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে বিচার চান নবজাতকের বাবা-মাসহ স্বজনেরা।

আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালের দিকে এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নবজাতকের বাবা।এর আগে,শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা আল রাজি হাসপাতালে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।মৃত নবজাতক উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আজুগিরচালা গ্রামের নাজমুল ইসলাম ও শারমিন আক্তার দম্পতির।

নবজাতকের বাবা নাজমুল ইসলাম বলেন,শনিবার সকালে সাড়ে ৮টার দিকে আমার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে আল রাজি হাসপাতালে ভর্তি করায়।পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ১৩ হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশন করার চুক্তি হয়।আমার স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন না করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করে সময় পার করতে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় নার্স কল্পনা আক্তার নরমাল ডেলিভারির করার সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়।নবজাতকের মা শারমিন আক্তার বলেন,আমার ব্যাথা উঠলে ওই হাসপাতালে ভর্তি রাখার পর থেকে কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করে। এরপর নার্সেরা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।এক পর্যায়ে জরায়ুর মুখ কেটে মৃত নবজাতক বের করে।

ওই হাসপাতালের নার্স কল্পনা আক্তার বলেন,কয়েক বছর যাবৎ অপারেশন থিয়েটারে কাজ করা কারনে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে।রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় আমি নবজাতক ডেলিভারি করায়।ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতক কান্না না করায় অন্য একটি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান নবজাতক মারা গেছে।

আল রাজি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) রাসেল মিয়া বলেন,এখানে কোনো চিকিৎসক ছিলো না।তাই,রোগী ভর্তি করতে নিষেধ করেছিলাম নার্স কল্পনাকে।আমাকে না জানিয়ে কখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলো আমি জানি না।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব হাসপাতালে কয়েকদিন পরপরই শিশুসহ রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ওইসব ঘটনা গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়।প্রশাসনও শক্ত কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন অপরাধ বেড়েই চলছে।এসব ঘটনার মধ্যে একটির সঠিক বিচার হলে এমন অপরাধ হতো না।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন,এ ঘটনা অবগত হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি।বিষয়টি তদন্ত করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।হাসপাতালটির লাইসেন্স আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,আগে তারা সময় নিয়েছে।এখন কাগজপত্র কি আছে তা দেখানোর জন্য কয়েকদিন আগে চিঠি দিয়েছি।শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম বলেন,মৃত নবজাতককে নিয়ে তার বাবা-মা ও স্বজনেরা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।ইতোমধ্যে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।আমরা তদন্ত করে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলাম বলেন,স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সাথে নিয়েই ঘটনা তদন্ত যাবে উপজেলা প্রশাসন।লাইসেন্সসহ আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো দেখে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মামুনুর রহমান সাংবাদিককে বলেন,খবর পেয়ে সেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সরেজমিনে গিয়ে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।তাঁর প্রতিবেদনের পর সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই হাসপাতালে পাঠানো হবে। দুই স্তরের তদন্তের রিপোর্ট দেখে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এসব ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পরবর্তী সময়ে আলোর মুখ দেখে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সিভিল সার্জন বলেন,এসব ঘটনার কিছুদিন পর বাদী বিবাদী মিলে যায়।যার ফলে আমাদের সাথে আর কেউ যোগাযোগ করেনা। তাই আমরা কার্যকর তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনা।এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কিছুই করার থাকে না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

নার্স দিয়ে ডেলিভারীতে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

Update Time : ০৭:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

নার্স দিয়ে ডেলিভারীতে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

মোঃসুলতান মাহমুদ,শ্রীপুর:=গাজীপুরের শ্রীপুরে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে নার্স দিয়ে প্রসূতির ডেলিভারী করার সময় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে আল রাজি নামক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর মৃত নবজাতককে নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে বিচার চান নবজাতকের বাবা-মাসহ স্বজনেরা।

আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালের দিকে এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নবজাতকের বাবা।এর আগে,শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে পৌরসভার মাওনা চৌরাস্তা আল রাজি হাসপাতালে নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।মৃত নবজাতক উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আজুগিরচালা গ্রামের নাজমুল ইসলাম ও শারমিন আক্তার দম্পতির।

নবজাতকের বাবা নাজমুল ইসলাম বলেন,শনিবার সকালে সাড়ে ৮টার দিকে আমার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে আল রাজি হাসপাতালে ভর্তি করায়।পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ১৩ হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশন করার চুক্তি হয়।আমার স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন না করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করে সময় পার করতে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় নার্স কল্পনা আক্তার নরমাল ডেলিভারির করার সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়।নবজাতকের মা শারমিন আক্তার বলেন,আমার ব্যাথা উঠলে ওই হাসপাতালে ভর্তি রাখার পর থেকে কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করে। এরপর নার্সেরা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।এক পর্যায়ে জরায়ুর মুখ কেটে মৃত নবজাতক বের করে।

ওই হাসপাতালের নার্স কল্পনা আক্তার বলেন,কয়েক বছর যাবৎ অপারেশন থিয়েটারে কাজ করা কারনে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে।রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় আমি নবজাতক ডেলিভারি করায়।ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নবজাতক কান্না না করায় অন্য একটি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান নবজাতক মারা গেছে।

আল রাজি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) রাসেল মিয়া বলেন,এখানে কোনো চিকিৎসক ছিলো না।তাই,রোগী ভর্তি করতে নিষেধ করেছিলাম নার্স কল্পনাকে।আমাকে না জানিয়ে কখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলো আমি জানি না।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব হাসপাতালে কয়েকদিন পরপরই শিশুসহ রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ওইসব ঘটনা গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়।প্রশাসনও শক্ত কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন অপরাধ বেড়েই চলছে।এসব ঘটনার মধ্যে একটির সঠিক বিচার হলে এমন অপরাধ হতো না।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন,এ ঘটনা অবগত হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি।বিষয়টি তদন্ত করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।হাসপাতালটির লাইসেন্স আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,আগে তারা সময় নিয়েছে।এখন কাগজপত্র কি আছে তা দেখানোর জন্য কয়েকদিন আগে চিঠি দিয়েছি।শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম বলেন,মৃত নবজাতককে নিয়ে তার বাবা-মা ও স্বজনেরা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।ইতোমধ্যে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।আমরা তদন্ত করে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলাম বলেন,স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সাথে নিয়েই ঘটনা তদন্ত যাবে উপজেলা প্রশাসন।লাইসেন্সসহ আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো দেখে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মামুনুর রহমান সাংবাদিককে বলেন,খবর পেয়ে সেখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সরেজমিনে গিয়ে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।তাঁর প্রতিবেদনের পর সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করে ওই হাসপাতালে পাঠানো হবে। দুই স্তরের তদন্তের রিপোর্ট দেখে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এসব ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পরবর্তী সময়ে আলোর মুখ দেখে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সিভিল সার্জন বলেন,এসব ঘটনার কিছুদিন পর বাদী বিবাদী মিলে যায়।যার ফলে আমাদের সাথে আর কেউ যোগাযোগ করেনা। তাই আমরা কার্যকর তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনা।এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কিছুই করার থাকে না।